চট্টগ্রাম আল-মামুন খান
চট্টগ্রামে আবার সক্রিয় হয়ে উঠছে হিযবুত তাহ্রীর। ২০০১ সালে কার্যক্রম শুরু হওয়া হিযবুত তাহ্রী গত ২২ অক্টোবর ২০০৯ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু সম্প্রতি বন্দর নগরী চট্টগ্রামে সক্রিয় হয়ে উঠেছে হিযবুত তাহ্রীর। বিশেষ করে তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র মুক্তি। ২১ ফেব্র“য়ারি চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় পোস্টার লাগানোর সময় ধরা পড়ে এ সংগঠনের এক কর্মী। নাজমুল হুদা নামের এই কর্মীর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায়। সে বর্তমানে চট্টগ্রামের ওআর নেজাম রোডের চার্টার্ড এ্যাকাউন্টেন্সিতে পড়াশোনা করে। পুলিশ নাজমুলের কাছ থেকে বেশ কিছু উস্কানিমূলক আটটি পোস্টার আটক করে। পরদিন পুলিশ হিযবুত তাহ্রীর কর্মী নাজমুল হুদাকে নিয়ে নগরের অক্সিজেন এলাকায় তার বাসায় অভিযানে গেলে আরো ৪৫টি লিফলেট উদ্ধার হয়। এ ছাড়া সে পুলিশকে আরো জানায়, বেশ কিছু কর্মী আছে এ কাজে সক্রিয়। যারা অধিকাংশই বিভিন্ন জেলার।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিযবুত তাহ্রীর চট্টগ্রাম নগরের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিযবুত তাহ্রীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র মুক্তি আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা অতি পরিচিতদের মধ্যে বেশি করে কার্যক্রম চালাচ্ছে। ছাত্র মুক্তির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক মোঃ শরিফের নেতৃত্বে তারা এ ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে। আর তাকে সহযোগিতা করছে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ফারাবি এবং বিবিএর ছাত্র কিশোর। এ ছাড়া আইন অনুষদ এবং বিবিএর আরো কিছু শিক্ষার্থী এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে একাধিক সূত্র হতে জানা গেছে। তবে তাদের নাম জানা যায়নি। এরা কলা অনুষদের ঝুপড়ির আলমগীরের দোকানে নিষিদ্ধ হওয়ার আগে নিয়মিত মিটিং করলেও এখন কিছুটা অনিয়মিত দেখা যায়। আরো জানা গেছে, নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়ার পর পরই এরা আবার এ কার্যক্রম শুরু করেছে নতুনদের এ দলে ভিড়ানোর জন্য। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনে হিযবুত তাহ্রীর পোস্টারে ছেয়ে গেছে। কারা কখন এ পোস্টার লাগিয়েছে কেউই তা বলতে পারে না। গত তিন জানুয়ারিতে প্রথম পোস্টার দেখা যায়। তাতে লেখা ছিল এই সংগঠনটির প্রধান মহিউদ্দিন নির্দোষ। তাই তাকে মুক্তি দেয়া হোক। আর ২৩ ফেব্র“য়ারির সকালে শাটলে আবার পোস্টার দেখা যায়। পুরো শাটলের প্রায় প্রত্যেকটি বগিতে ছিল এ পোস্টার। সেখানে লেখা হয়েছে বর্তমান সরকারের ষড়যন্ত্রে এই সেনাবিদ্রোহ হয়েছে। আর এতে মদদ জুগিয়েছে ভারত, যা এই দেশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণœ করেছে। এর আগেও নিষিদ্ধ হওয়ার পরও ভর্তি পরীক্ষার সময় বিশাল ব্যানার টানিয়ে দেয় ভর্তিচ্ছুদের স্বাগত জানিয়ে। সেখানে যে কোনো ভর্তিচ্ছুদের সহযোগিতার জন্য নাম এবং মোবাইল নম্বর দিয়ে দেয়া হয়। এ ছাড়া লিফলেটও বিতরণ করে। এ সব কিছুই জনসম্মুখে ঘটলেও প্রশাসন সব সময়ই ছিল মুখ বুজে। এবারো পোস্টার লাগানোর কথা বলা হলেও প্রশাসন সেগুলো তুলে ফেলার কোনো ব্যবস্থা করেনি। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্তও শাটলে লাগানো ছিল।
হেফাজতে ইসলাম গত ২৪ ফেব্র“য়ারি জঙ্গি মিছিলের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম নামের একটি সংগঠনের আগমন জানিয়ে দিয়েছে। পুলিশ বাধা দেয়ায় তারা এ সময় বোমা হামলা করে পুলিশের ওপর। এতে বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সবুরসহ ছয়জন পুলিশ আহত হয়। এমনকি কোনো প্রকার পূর্ব অনুমতি না নিয়ে লালদীঘি ময়দানে মহাসমাবেশের ডাক দেয়। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিলসহ সরকারের নানা কর্মকা-ের প্রতিবাদে এবং শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে তারা এ সমাবেশ আয়োজন করেছিল বলে জানা যায়। ওই দিন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা হাটহাজারীর দারুল উলম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসা থেকে গাড়ির বহর নিয়ে লালদীঘি আসার পথে পুলিশ বাধা দিলে তারা বোমা নিক্ষেপ করে। এমনকি পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নেয়, যা পরবর্তীতে এই মাদ্রাসা এলাকা থেকেই পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। কিন্তু অস্ত্র উদ্ধার হলেও এখনো উদ্ধার হয়নি ১০ রাউন্ড গুলি। একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য মতে, চট্টগ্রামের এ নতুন সংগঠনটির সভাপতি হাটহাজারীর দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা আহমেদ। পুলিশ কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য মতে, সংগঠনটির নেপথ্যে রয়েছে ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের নেতা মুফতি ইজহারুল ইসলাম। এরা ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের সঙ্গে জড়িত রয়েছে এটা জানা গেছে, তবে নিবন্ধনহীন এই দলটির বিষয়ে আমরা বিশেষ নজরদারি করছি। এদের কেন্দ্রস্থল হাটহাজারী বড় মাদ্রাসা। বিশেষ করে অন্য কোনো বিশেষ সংগঠনের সঙ্গে এদের যোগাযোগ আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে? বর্তমানে হাটহাজারীর দারুল উলম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসা বা বড় মাদ্রাসায় প্রায় সাত হাজার ছাত্র পড়াশোনা করছে। এর নিয়ন্ত্রণে আছে চট্টগ্রামের আরো কয়েকশ কওমী মাদ্রাসা। যার কোনো হিসাবই চট্টগ্রামের কোনো শিক্ষা অফিসই দিতে পারেনি। এ হিসাব শুধু আছে চট্টগ্রামের এ বড় মাদ্রাসায়। এই মাদ্রাসাগুলো কাদের টাকায় চলে কিংবা কি হয় অথবা কি পড়ানো হয় তা সাধারণ জনগণ জানে না। আর এই মাদ্রাসাগুলোর ছাত্রদের নিয়েই গড়ে উঠেছে হেফাজতে ইসলাম নামের এই সংগঠনটি, যা নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে পুরো চট্টগ্রামের মানুষের মধ্যে। |